Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

পুষ্টির উন্নতিতে বাংলাদেশের করণীয়

বাংলাদেশ বর্তমানে খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন করলেও বৈশ্বিক প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশের পুষ্টি পরিস্থিতি কাক্সিক্ষত পর্যায়ে অর্জন সম্ভব হচ্ছে না। শিশুদের খর্বতা, কৃশতা, অতি ওজন এবং নারীদের রক্তস্বল্পতা কমানোর ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশের উন্নতি সন্তোষজনক নয়। কৃষি গবেষণায় আন্তর্জাতিক সংস্থা    ওয়াশিংটনভিত্তিক আন্তর্জাতিক খাদ্যনীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান (ওঋচজও) তাদের ওয়েবসাইটে বৈশ্বিক পুষ্টি প্রতিবেদন ২০১৪ প্রকাশ করেছে। ১৯ থেকে ২১ নভেম্বরে ইতালির রোমে অনুষ্ঠেয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক পুষ্টি সম্মেলন উপলক্ষ্যে বৈশ্বিক পুষ্টি পরিস্থিতির এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) যৌথভাবে এই সম্মেলনের আয়োজন করেছে। বাংলাদেশের পক্ষে কৃষি মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল এই সম্মেলনে যোগদান করেন।
পুষ্টি নিয়ে বৈশ্বিক প্রতিবেদন এটাই প্রথম। এতে বলা হয়েছে ২০২৫ সালের মধ্যে খর্বকায় (ঝঃঁহঃরহম), কৃশকায় (ডধংঃরহম), স্থূল (ঙনবংরঃু), কম ওজনের নবজাতক ও শুধু বুকের দুধ খাওয়া শিশু এবং রক্তস্বল্পতার শিকার নারী বিষয়ে ছয়টি সূচকে অগ্রগতির লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। এর মধ্যে দুইটি সূচকে অগ্রগতি হলেও চারটি সূচকে বাংলাদেশের কাক্সিক্ষত অর্জন করতে হবে।
বিশ্বের প্রতিটি দেশেই অপুষ্টির সমস্যা আছে। পৃথিবীর ২০০ থেকে  ৩০০ কোটি মানুষ বিভিন্ন ধরনের অপুষ্টির শিকার। কেউ বয়সের তুলনায় খর্ব, কৃশ বা কম ওজনের, কেউ স্থূল, আবার কেউ অপুষ্টি উপাদানের ঘাটতিতে ভুগছে। হাড্ডিসার শিশু, শ্বাসকষ্টে ভোগা স্থূলকায় মানুষ, প্রথম জন্মদিনের আগেই মারা যাওয়া শিশু এসবই অপুষ্টির নানা চেহারা। প্রতিবেদনে পুষ্টির চ্যালেঞ্জকে একবিংশ শতাব্দীর উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, টেকসই উন্নয়ন এজেন্ডার কেন্দ্রে থাকবে পুষ্টি পরিস্থিতি উন্নতির বিষয়টি। পুষ্টির উন্নতি জীবনব্যাপী এবং আন্তঃপ্রজন্ম স্থায়ী হয়।
২০১২ সালের বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলনের পুষ্টিবিষয়ক অধিবেশনে পুষ্টি পরিস্থিতি উন্নতির জন্য ছয়টি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল।  বলা হয়েছিল, ২০২৫ সালের মধ্যে খর্বকায় শিশু ৪০ শতাংশ, রক্তস্বল্পতার শিকার নারী ৫০ শতাংশ, কম জন্ম ওজনের শিশু ৩০ শতাংশ এবং কৃশকায় শিশুর সংখ্যা ৫ শতাংশ কমাতে হবে। ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শুধু বুকের দুধ খাওয়া শিশু ৫০ শতাংশ বাড়াতে হবে। আর স্থূল বা বয়সের তুলনায় অতি ওজনের শিশু হার কমাতে হবে। এই প্রতিবেদনে খর্বতা, রক্তস্বল্পতা, কৃশতা ও অতি ওজন এই চারটি সূচক ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে মানুষের খর্বতা ২ দশমিক ৭ শতাংশ হারে কমছে। অথচ ২০২৫ সালের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে বছরে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ হারে খর্বতা কমাতে হবে।  অবশ্য কাক্সিক্ষত পর্যায়ে অর্জন না হলেও বাংলাদেশ খর্বতা কমানোর ক্ষেত্রে অনেক ভালো করেছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এখানে ৫ বছরের কম বয়সি শিশুদের খর্বতা কমানোর হার ভারতের চেয়েও দ্বিগুণের বেশি। এটা কেমন করে সম্ভব হলো, তারও একটি ব্যাখ্যা প্রতিবেদনে দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, সম্পদ বৃদ্ধি, বাবা মায়ের শিক্ষার উন্নতি, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের আওতা বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যসেবার উন্নতি এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। বাংলাদেশ প্রজননক্ষম নারীদের একটি বড় অংশ রক্তস্বল্পতায় ভোগে।  প্রতিবেদন বলেছে, রক্তস্বল্পতা বছরে শূন্য দশমিক  ৬ শতাংশ হারে কমছে। অন্যদিকে পাঁচ বছরে কম বয়সি ১৫ দশমিক ৭ শতাংশ শিশু কৃশকায়। কৃশকায় শিশু কত হারে কমছে, তার উল্লেখ না থাকলেও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ ক্ষেত্রেও লক্ষ্য অর্জনের পথে নেই বাংলাদেশ। প্রতিবেদনে অনুযায়ী,  বাংলাদেশে পাঁচ বছরের কম বয়সি অধিক ওজনের শিশুর সংখ্যাও বাড়ছে।
১১৮ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে শুধু নিম্ন আয়ের দেশের জন্যই নয়, অপুষ্টি সব দেশেরই উদ্বেগের বিষয়, অনেক উচ্চআয়ের দেশেও এই সমস্যা আছে। যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৭০ সালের তুলনায় স্থূল মানুষ দ্বিগুণ হারে বাড়ছে। দেশটি বয়স্কদের ৬৯ শতাংশ এবং শিশুদের ৩২ শতাংশ স্থূল। একই সমস্যা যুক্তরাজ্যেও। দেশটির ৬৭ শতাংশ পুরুষ ও ৫৭ শতাংশ নারী স্থূল। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, অপুষ্টি দূর করার ক্ষেত্রে উন্নত দেশ ও দাতাগোষ্ঠী তহবিল সরবরাহের যেসব প্রতিশ্রুতি বিভিন্ন সময় দিয়েছিল তাও অনেক ক্ষেত্রে পূরণ হয়নি। অপুষ্টি দূর করার জন্য দাতা, সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর জবাবদিহি নিশ্চিত করার পাশাপাশি যারা পুষ্টি নিয়ে ভালো কাজ করছেন, তাদের সংগঠিত করতে হবে,   সহায়তা দিতে হবে, স্বীকৃতি দিতে হবে এবং তাদের ভালো কাজের বিস্তার ঘটাতে হবে।
গত ১৩ আগস্ট ২০১৭ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় পুষ্টি পরিষদের (এনএনসি) সভায় বলেন, আমাদের খাদ্য নিরাপত্তার পাশাপাশি জনগণের পুষ্টি নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, তাঁর সরকার দেশের জনগণের খাদ্যনিরাত্তা নিশ্চিত করেছে। এখন পুষ্টি নিশ্চিত করাই প্রধান লক্ষ্য। পুষ্টির সঙ্গে অনেক কিছু সম্পৃক্ত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুষ্টির বিষয়ে শহরাঞ্চলে সচেতনতা সৃষ্টি হলেও গ্রামাঞ্চলে জনগণের মধ্যে আরও সচেতনতা বাড়ানোর প্রয়োজন আছে (প্রথম আলো ১৩ আগস্ট,২০১৭)। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ ও কৃষি তথ্য সার্ভিস তাদের দায়বদ্ধতা থেকে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু পুষ্টি সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ ও তথ্য প্রচার পরিচালনা করছে। তবে আমি মনে করি গ্রামের গরিব ও অসচেতন জনগোষ্ঠীর কাছে আরো বেশি করে পুষ্টি সম্পর্কিত তথ্য সমন্বিত প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগের মাধ্যমে বহুল প্রচার করা উচিত। গণমাধ্যমও এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
বাংলাদেশের জন্য করণীয়
বাংলাদেশের জন্য করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান তাহমিদ আহমেদ বলেন, মানুষের জীবিকা বা ভালো উপার্জনের ব্যবস্থা করতে হবে, শিশু খাদ্যের ব্যাপারে মানুষকে সচেতন করতে হবে এবং বিশুদ্ধ পানি ও  পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিবেদনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাসচিব মার্গারেট চ্যান বলেছেন পৃথিবীর সব প্রান্তে থাকা অপুষ্টি দূর করতে হলে অনেক ক্ষেত্রে একযোগে কাজ করতে হবে। স্বাস্থ্য খাতের একার পক্ষে এই কাজ করা সম্ভব নয়। তবে এক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি বাড়ছে। স্বাস্থ্যকর খাবারের জন্য করণীয় সম্পর্কে অনেক দেশ এখন অনেক সজাগ। এই প্রতিবেদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্পর্কে এবং কোথায় বিনিয়োগ দরকার তা জানতে সহায়তা করবে। (সূত্র- প্রথমআলো, নভেম্বর ২০১৪)।
খাদ্য বিষয়ক আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (ওঋচজও) মহাপরিচালক শেনগেন ফান গত ২০ আগস্ট ২০১৫ ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের কৃষি ও স্বাস্থ্য পরিস্থিতি নিয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করেছেন, জাতীয় নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে তাহা বিবেচনায় নেয়া যেতে পারে। তিনি কৃষি উন্নয়নে বাংলাদেশের সাফল্যের প্রশংসা করার পাশাপাশি শিশুদের পুষ্টির চাহিদা পূরণের তাগিদ দিয়েছেন। এতে তিনি মানুষের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।    ইফপ্রির মহাপরিচালক বলেছেন এদেশের মানুষের ৭৭ শতাংশ ক্যালরি ও ৫০ শতাংশ প্রোটিন আসে ভাত থেকে। অপুষ্টি দূর করতে ও গড় উচ্চতা বাড়াতে হলে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে চাল ছাড়াও অন্যান্য পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে।
বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৮০ ভাগ লোক গ্যাস্ট্রিকে আক্রান্ত, ২০-২২% লোক হৃদরোগে আক্রান্ত, ৮০-৯০ লাখ লোক ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, প্রায় ১০-১২ লক্ষ লোক কিডনি রোগে আক্রান্ত এবং ১৫ লক্ষ লোক ক্যান্সারে আক্রান্ত (বাংলাদেশ প্রতিদিন এপ্রিল ২০১৫ ও মার্চ ২০১৬)। আর বিশ্বে প্রতি ১১ জনে একজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত (সময় টিভি-৬ এপ্রিল ২০১৬)। আর এসব রোগের মূল কারণ ভেজাল খাদ্য গ্রহণ, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন না করা, সুষম খাদ্য গ্রহণে অসচেতনতা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, পয়ঃনিষ্কাশন ও সুপেয় পানির অভাব এবং পুষ্টি সম্পর্কে অজ্ঞতা।
বাংলাদেশ সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ফলিত পুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট সীমিত আকারে জেলা পর্যায়ে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে, যা চাহিদার তুলনায় একেবারেই নগণ্য। শহরের বস্তিবাসী, গ্রামের গরিব ও অসচেতন জনগোষ্ঠীর কাছ আরো বেশি করে পুষ্টি সম্পর্কিত তথ্য  সমন্বিত প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগের গণমাধ্যমে বহুল প্রচার করা উচিত। প্রতিদিন অন্তত ফল এবং সবজি পরিমাণ মতো (৪০০ গ্রাম) খাওয়া প্রতিটি মানুষের একান্ত কর্তব্য। এতে     কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠপর্যায়ের সম্প্রসারণ কর্মীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এর সাথে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, মহিলা ও শিশুবিষয়ক এবং সমাজসেবা মন্ত্রণালয়ও যুক্ত থাকতে পারে। জনগণের মধ্যে পুষ্টি সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য   কৃষি মন্ত্রণালয় খাদ্য উৎপাদনের পাশাপাশি পুষ্টি সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা ও গণমাধ্যমে প্রচার জোরদার করা উচিত। এতে মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণের পাশাপাশি স্বাস্থ্যও সুরক্ষা হবে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (ঝঁংঃধরহধনষব উবাবষড়ঢ়সবহঃ এড়ধষ) বিশেষ করে ঝউএ-১ ্ ঝউএ-২ অর্জন সহজ হবে।

 

ড. মো. দেলোয়ার হোসেন মজুমদার

উপপরিচালক (এলআর-পিআরএল), খামারবাড়ি, ঢাকা, বাড়ি নং ৩৮, রোড নং-১, সেক্টর-৬, উত্তরা, ঢাকা  ফোন : ০১৮১৫৫৯৭৩০৪, ই-মেইল : dhossain1960@yahoo.com 


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon